আপনারা যারা ইউটিউবে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে থাকেন তাদের সকলেই হয়তোবা ভিডিও এর ভিউ না হওয়া নিয়ে সমস্যা ফেস করেছেন। হয়তোবা তার ভিতর অনেক ভালো মানের ভিডিও ছিলো যা ভালো র্যাঙ্ক পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। তবুও ভিডিও র্যাঙ্ক না হওয়ায় হতাশ। আর তাই আপনাদের জন্যই এই পোস্ট। এখানে ইউটিউব এসইও এর খুঁটিনাটি নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে। আশা সেটাই আপনাদেরকে ইউটিউব এসইও এর সম্পর্কে বুঝতে যথেষ্ট সহায়তা করবে।
ইউটিউব এসইও এর খুঁটিনাটি
ইউটিউব মাত্র ভিডিও প্রমোট করার ওয়েবসাইট। আর ইউটিউব অথবা গুগল সার্চ ইঞ্জিন এখন পর্যন্ত আপনার ভিডিও দেখে বুঝতে সক্ষম নয় যে এই ভিডিও র্যাঙ্ক করবে কিনা। তাছাড়া ভিডিও এর মান, ভিডিও এর ধরণ থেকে শুরু করে কোন কিছুই ভিডিও থেকে গুগল পাচ্ছে না। ফলে সাধারণ নিয়মেই গুগল তাই টেক্সট এর উপরেই ভরসা করে যাচ্ছে। ইয়াপ ব্লগ এর মতোই এখানেও টেক্সট ভিত্তিক নিয়মেই ভিডিও সার্চ র্যাঙ্কিং করা হয়। তাই ইউটিউব এসইও এর মূল ভিত্তি ভিডিও আপলোড করার সময় দেয়া টেক্সট কনটেন্ট। তবে এছাড়া আরো কিছু বিষয় যদিও প্রভাব ফেলতে সক্ষম যেমন চ্যানেলের বয়স, ভিডিও শেয়ারিং, লাইক এবং ভিউ কাউন্ট ইত্যাদি। আর আজকে শুধু আমরা টেক্সট এর ব্যাপারেই জানবো।
টাইটেল এবং ট্যাগ
ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার সময় সবচেয়ে বেশী যে বিষয়ে নজর দিতে হবে তা হচ্ছে টাইটেল এবং ট্যাগ। টাইটেল ব্যবহারের সময় উচিৎ মেইন কীওয়ার্ড টাইটেলে রাখা। আবার টাইটেল যতো ভালো হবে ততো বেশী ভিউয়ার আকৃষ্ট হবে ভিডিও ওপেন করে দেখতে। তাই চেষ্টা করুন সবসময়ে আকর্ষণীয় টাইটেল ব্যবহার করতে আবার আকর্ষণীয় করার পাশাপাশি প্রধান কীওয়ার্ডটিও টাইটেলে অন্তর্ভুক্ত করতে। আর প্রধান কীওয়ার্ড এর পাশাপাশি সমার্থক বা একই বিষয়ের অন্যান্য কীওয়ার্ড যার সাথে ভিডিওর সম্পর্ক রয়েছে সেসব কীওয়ার্ডসমূহ ট্যাগে দেয়ার জন্য। যাতে কাছাকাছি অর্থবহ সার্চেও আপনার ভিডিও র্যাঙ্ক করতে পারে। তবে অপ্রয়োজনীয় কীওয়ার্ড ব্যবহার না করাই ভালো। আর কিছু জরুরী বিষয় মাথায় রাখতে ভুলবেন না যেমনঃ
- কীওয়ার্ড দীর্ঘ হলে সমস্যা নেই কিন্তু প্রথম ৭০ শব্দে ভিডিও কি বিষয়ের তা উল্লেখ করুন। যদিও ইউটিউব আপনাকে ১০০ শব্দের টাইটেল লিখতে দিচ্ছে কিন্তু বেশীরভাগ সার্চ ইঞ্জিন ৭০ শব্দ পর্যন্ত টাইটেল দেখায়। বাকিটা আর দেখা যায় না বলে এটাই সবচেয়ে ভালো।
- ট্যাগ কোনভাবেই যেন ২০ টির বেশী না হয়। ১০ থেকে ২০ টি কীওয়ার্ড ব্যবহার করাই ভালো।
- টাইটেল এবং ট্যাগ সঠিক ভাবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনে একই ধরণের টপ কিছু ভিডিও নিয়ে রিসার্চ করে নিন।
- টাইটেল সম্ভব হলে দীর্ঘ করুন এবং চেষ্টা করুন একাদিক কীওয়ার্ড টাইটেলে অন্তর্ভুক্ত করতে। তবে কোনভাবেই তা যেন টাইটেল অসুন্দর করে না ফেলে। সুন্দর টাইটেল ভিউয়ারকে ক্লিক করতে আগ্রহী করে তুলতে সক্ষম।
দীর্ঘ ভিডিও ডেসক্রিপশন
ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার ক্ষেত্রে আপনি ৫০০০ শব্দ পর্যন্ত ভিডিও ডেসক্রিপশন লিখতে পারবেন। যদিও এই ৫০০০ শব্দ পূরণ করতেই হবে এমনটা নয় তবে ভিডিওর ভালো র্যাঙ্কিং এর জন্য এর যতোটা সম্ভব ব্যবহার করতে হবে তবে অবশ্যই বিষয়ের আলোকেই। উদাহারণ হিসেবে বলা যায় ধরুন আপনি একটি প্রোডাক্ট এর রিভিউ নিয়ে ভিডিও আপলোড করবেন। তাহলে এই প্রোডাক্ট এর রিভিউ ভিডিও এর পাশাপাশি ডেসক্রিপশনেও লিখতে পারেন। এতে ভিডিও এর কনটেন্ট সম্পর্কে গুগল সার্চ ইঞ্জিন একটি ধারণা পাচ্ছে। আর ডেসক্রিপশন লিখার সময় প্রয়োজনীয় কীওয়ার্ডগুলোও আপনি সেখানে উল্লেখ করতে পাছেন। যা গুগলকে সহায়তা করবে ভিডিও র্যাঙ্ক করানোর জন্য। আর কিছু বেষ্ট প্র্যাকটিস উল্লেখ করা হলো যা নিয়মিত ফলো করতে পারেন ভালো ফলাফলের জন্য।
- টাইটেলে ব্যবহার করা বা প্রধান কীওয়ার্ড অন্তত একবার হলেও ডেসক্রিপশনে ব্যবহার করুন।
- আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকলে তার লিংক ডেসক্রিপশনের প্রথম প্যারাগ্রাফেই দিতে চেষ্টা করুন। শুধু লক্ষ রাখবেন লিংক যেন প্রথম ১৫৭ শব্দ (সার্চ পেইজে প্রথম ১৫৭ শব্দ দেখা যায়) কিন্তু ভিডিও পেইজে শুরুতেই ডেসক্রিপশনের যতটুকু দেখা যায় তার ভিতর লিংকটি থাকে। যাতে Show More লিখাটির আগেই আপনার ওয়েবসাইট এর লিংক দেখা যায়।
- প্রথম ১৫৭ শব্দ এর ভিতর আপনার ভিডিওর একটি সংক্ষেপে কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্য সমৃদ্ধ ডেসক্রিপশন লিখুন যাতে সার্চ রেজাল্ট পেইজে এই ১৫৭ শন্দ দেখেও ভিউয়ার ভিডিও দেখতে আগ্রহী হতে পারে।
- সেই সাথে ভিডিও এর ডেসক্রিপশনে রিলেটেড অন্য ভিডিও এবং ওয়েবসাইটের লিংক দিন। তবে রিলেটেড না হলে না দেয়াই ভালো।
কীওয়ার্ড ভিত্তিক প্লেলিস্ট
যদি আপনি একই বিষয়ের উপর একাদিক ভিডিও আপলোড করে থাকেন তবে সেসকল ভিডিও এর প্রধান কীওয়ার্ড বা ভালো কীওয়ার্ড এর উপর প্লেলিস্ট তৈরি করে সেই প্লেলিস্ট দিয়ে আপনার চ্যানেল সাজাতে পারেন। এতে আপনার চ্যানেলও যেমন আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে সেই সাথে কীওয়ার্ডগুলোর উপর সার্চে আপনার প্লেলিস্টও রেজাল্ট পেইজে দেখাবে। ফলে সার্চ থেকে আরো ভালো ফলাফল আশা করা সম্ভব হবে। তবে কিছু ব্যপারে নজর রাখবেন যেমনঃ
- এক কীওয়ার্ডের প্লেলিস্টে অন্য বিষয়ের ভিডিও রাখবেন না।
- প্লেলিস্টের ডেসক্রিপশনে আপনি চাইলে ভিডিও ডেসক্রিপশনের মতোই ডেসক্রিপশন লিখতে পারেন। এটাও আপনার সার্চ র্যাঙ্কিং এ সহায়তা করবে।
ভিডিওর র’ ফাইলে এসইও
অনেকেই জানেন না যে র’ ভিডিওতেও এসইও করা সম্ভব। র’ ভিডিও বলতে আপনি যেই ভিডিওটি রেডি করেছেন ইউটিউবে আপলোড দেয়ার জন্য সেটাকেই বুঝানো হচ্ছে। আর সেই এসইও ইউটিউব ভিডিও এর সার্চেও কাজে আসে। কিভাবে? ইউটিউবে আপনি যে ভিডিও ফাইলটি আপলোড করবেন সেটার মেটাট্যাগ বা ভিডিও ফাইলের ইনফোতে আপনি কীওয়ার্ড বা ট্যাগ থেকে শুরু করে ডেসক্রিপশন লিখতে পারবেন। সেই সাথে আরো অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য। যা ভিডিও আপলোড শেষে ইউটিউব দেখতে পারবে সেই সাথে গুগল। এবং এই তথ্যগুলোর উপর ভিত্তি করে গুগল সার্চে র্যাঙ্কিং করতে পারবে। ফলে আপনি আরো কিছু সুযোগ নিতে পারছেন আপনার ভিডিও র্যাঙ্কিং এর জন্য। এর জন্য আপনি ভিডিও এর প্রোপার্টিস এ যান এবং সেখানে ফাইল ইনফোতে তথ্যগুলো দিয়ে দিতে পারেন। নিচের ছবিতে এর ব্যাপারে আইডিয়া পাবেন। তবে ছবিটি শুধু মাত্র স্যাম্পল হিসেবেই তৈরি।
আর এই একই ভাবে কাস্টম থাম্বনেইল ব্যবহারের আগেও সেই ফাইল বা ছবিকেও এডিট করতে পারেন। যাতে থাম্বনেইলও এসইওতে সহায়তা করতে পারে।
চ্যানেল ডিজাইন
চ্যানেল ডিজাইন বা চ্যানেল পরিপূর্ণভাবে সাজিয়েও ভিডিও র্যাঙ্কিং এ সহায়তা পাওয়া সম্ভব। কেননা যখন একজন ভিউয়ার চ্যানেলে আসবে সে সবার প্রথমেই ডিজাইনের দিকেই লক্ষ্য করবে। তাই ডিজাইন অনেকভাবেই এক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। তবে শুধু চ্যানেল ডিজাইন নয়। কাস্টম থাম্বনেইলও এক্ষেত্রে একই ভাবেই কাজ করে। তাই শুরুতেই চ্যানেলের জন্য ভালো লোগো, কভার ফটো ইত্যাদি আপলোড করুন। সেই সাথে About Section অর্থাৎ লিংক, যোগাযোগের ঠিকানা, প্রোফাইল তথ্য ইত্যাদি দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্ট সাজিয়ে নিন। আর এখানেই প্রোফাইল তথ্য যেমন সার্চের কাজে আসবে তেমনই ভেরিফাইড ওয়েবসাইট লিংক, ইমেইলও সার্চে কাজে আসবে। তাই এসকল তথ্য সঠিকভাবে এবং সুন্দরভাবে ঘুছিয়ে দিতে চেষ্টা করতে পারেন।
সাবটাইটেল
ভিডিওতে যদি ভয়েস থাকে তবে সেক্ষেত্রে আপনি সাবটাইটেল ব্যবহার করেও ইউটিউব এসইও তে র্যাঙ্কিং পেতে পারেন। কেননা গুগল এখন সাবটাইটেল ব্যবহার করেও র্যাঙ্কিং করে এবং তা আপনার জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট বটে। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে অনুবাদ করেও আলাদা আলাদা সাবটাইটেল প্রকাশ করতে পারেন। যেমন আপনার ভিডিও যদি বাংলা ভয়েসে হয় তবে আপনি বাংলা সাবটাইটেল ব্যবহারের পাশাপাশি ইংলিশ সাবটাইটেলও ব্যবহার করতে পারেন। আর ভিডিও তৈরি করার সময় থেকেই কিছু কীওয়ার্ড ভয়েস হিসেবেও দিয়ে দিতে পারেন যাতে সেটা সাবটাইটেলেও ব্যবহার করে র্যাঙ্কিং এর সুবিধা নেয়া যায়। তবে কোন ভাবেই ভুল সাবটাইটেল দেয়া উচিৎ হবে না। কেন তা পরবর্তী পোস্টে বর্ণনা করার চেষ্টা করবো।
এছাড়াও আরো কিছু বিষয় রয়েছে যা ইউটিউব এসইও এর কাজে সহায়তা করে যেগুলো নিয়ে পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করা হবে। ততদিন এসকল নিয়ম অনুসরণ করে অভ্যাসে পরিণত করতে পারেন যাতে সবসময় ভিডিও আপলোড করার মুহূর্তে পদ্ধতিগুলো মনে থাকে এবং অনুসরণ করতে পারেন। আর আপনাদের কোন প্রশ্ন, সাজেশন বা আইডিয়া থাকলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এজন্য আমাদেরকে এখানে কমেন্টে অথবা ইমেইল বা ফেসবুক গ্রুপে জানাতে পারেন। আশা করছি পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে।