ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া

ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া – যা কিছু করা সম্ভব পর্ব ১

by Moin Uddin Ahmed Tipu
3291 views

অনেকেই জানতে চান অনলাইনের ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া নিয়ে। ফ্রীল্যান্সিং এ কি কি করা যায় এবং সে অনুযায়ী কোন কাজ শিখা যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অনলাইনে করা যায় এমন কাজের লিস্ট করা সম্ভব নয়। কেনোনা প্রায় সব কাজই অনলাইনে করা বা করানো সম্ভব। তারপরও চেষ্টা করা হলো কিছু কাজের নাম এবং সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে। আর এই লিস্ট অনলাইনে করা সম্ভব এমন কাজের মাত্র একাংশ এবং সংক্ষেপিত। এবং এখানে বেশী জনপ্রিয় কাজগুলোর বর্ণনাই দেয়া হলো।

 

সবচেয়ে বেশী ডিমান্ডের অনলাইন ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া

 

লিখালিখি (Writing)

লিখালিখি করে আয় করার পদ্ধতি সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক লিখালিখির কাজ হতে পারে বা নিজের ব্লগের পিছনেও লিখালিখি করাও হতে পারে। যেভাবেই হোক না কেন এই খাত থেকে ভালো আয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্লগ বা ওয়েবসাইট তাদের চাহিদা জানালে আপনাকে তাদের চাহিদা মতো লিখে দিতে হতে পারে। অথবা আপনি নিজের ব্লগেও লিখালিখি করতে পারেন। আর লিখালিখি করে আয় করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে খুব ভালো ইংরেজি জানতে হবে পাশাপাশি এসইও সম্পর্কে আইডিয়া রাখতে হতে পারে। আর এই সেক্টরে কাজ করতে চাইলে আপনাকে নিয়মিত আপনার লিখালিখির স্কিল বাড়াতে চেষ্টা করতে হবে। কেনোনা এখানে দক্ষ লোকদের কাজের মূল্যই সচেয়ে বেশী।

 

ওয়েব ডিজাইন/ডেভেলপমেন্ট (Website Design/Development)

ওয়েব ডিজাইন বা ডেভেলপমেন্ট কি তা হয়তোবা আপনি জানেন। তবুও বলছি। যদি আপনি ওয়েবসাইট ডিজাইন বা ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ শিখে থাকেন তবে আপনি হয়তোবা ভিন্ন ভিন্ন ধরণের ওয়েবসাইট ডিজাইন বা তৈরি করতে পারবেন। এখানে ডিজাইন বলতে শুধু বাহিরের আবরণকেই বুঝানো হচ্ছে। আর ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে ভিতরের কাজ মানে ওয়েবসাইট কিভাবে কাজ করবে বা ফাংশনগুলো তৈরি করাকে বুঝানো হচ্ছে। দুইটি একই সেক্টরের কাজ হলেও কাজের ধরণ বা কাজ করার পদ্ধতি ভিন্ন। তাছাড়া ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং এর কাজও রয়েছে যা পরবর্তী পয়েন্টে বলা হয়েছে। এখানে কি ধরণের কাজ করছেন তার উপর ভিত্তি করে আয়ের পরিমান কম বা বেশী হতে পারে।

 

গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics Design)

লোগো, ব্যানার, ফটো এডিট, বা বিভিন্ন শিল্প আঁকাই হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। এক্ষেত্রে কিছু আঁকাআঁকি করতে হতে পারে নিজের মতো করে বা ক্লাইন্ট এর চাহিদা অনুসারেও আঁকা লাগতে পারে। গ্রাফিক্সের কাজে এগুলো ছাড়াও আরো অনেক কিছুই রয়েছে যেমন কনটেন্ট ডিজাইন করা, বইয়ের মলাট বা কভার ডিজাইন, টেক্সট ব্যবহার করে কোন লিখাকে চিত্রতে রুপান্তর করা, বা কোন আইডিয়াকে চিত্রতে রুপান্তর করে বোধগম্য করা ইত্যাদি। আর একই সাথে ভিডিও এডিট করা বা তৈরি করাও এই গ্রাফিক্স এর অংশ। ক্ষেত্রটি আসলে বিশাল। ওয়েবসাইট ডিজাইনের ক্ষেত্রেও গ্রাফিক্সের কাজ রয়েছে আবার সাধারণ ছবি থেকে শুরু করে ভিডিও, অ্যানিমেশন ইত্যাদি এর অংশ। কাজের ধরণ অনুসারে আয়ও ভিন্ন। ভিডিও নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত রয়েছে।

 

অনলাইন মার্কেটিং (Online Marketing)

বর্তমানে ইন্টারনেট চারদিকে অলিগলির মতো ছড়িয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। তাই কোন প্রোডাক্ট বা ব্যবসার মার্কেটিং করার জন্য একটি উত্তম স্থান হতে পারে এই অনলাইন। তাই অনলাইন মার্কেটিং এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সঠিক জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকলে এখানেও ভালো একটি অবস্থান অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। গুগল, ফেসবুক থেকে শুরু করে প্রায় সকল ওয়েবসাইটেই রয়েছে বিজ্ঞাপন দেয়ার স্থান। আর সেই স্থান দখল করতে চায় প্রায় সকল কোম্পানি যাতে তাদের পন্য বা সার্ভিস সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে এবং ব্যবহারের জন্য আগ্রহী হয় বা বিক্রয় বৃদ্ধি পায়। তাই অনলাইন মার্কেটিং শিখে ভালো অবস্থান অর্জনের চেষ্টা করা যেতে পারে। গুগল অ্যাডসেন্স, গুগল অ্যাডওয়ার্ডস, ফেসবুক অ্যাডস, টুইটার অ্যাডস বা এগুলোর একটি শিখে নিলেও আপনি ভালো আয় করতে পারবেন। সেটা নিজের কাজে ব্যবহারের জন্য হোক আর কোন ক্লাইন্টের জন্য কাজ করে হোক।

 

ভিডিও তৈরি (Video Creation)

ভিডিও তৈরি করা যদিও গ্রাফিক্সের একটি অংশ তবে বর্তমানে এর পরিধি বাড়তে বাড়তে নিজেই একটি শক্ত অবস্থান দখল করে নিয়েছে। অ্যানিমেশন ভিডিও, মুভি, নাটক, প্রোমো ভিডিও ইত্যাদি তৈরি করা এর অংশ। ভিডিও তৈরি করে বা এডিট করে অথবা ভিডিও তৈরির জন্য টেম্পলেট তৈরি করেও এখান থেকে আয় করা সম্ভব। টেম্পলেটের ক্ষেত্রে Adobe After Effects, Adobe Premiere Pro বা অন্য কোন সফটওয়্যার দিয়ে ভিডিও টেম্পলেট তৈরি করে বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় করা যায়। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট টেম্পলেট কিনে নিজেদের প্রয়োজন মতো পরিবর্তন করে নিতে পারবে। আবার তাদের প্রয়োজন হলে আপনাকে হায়ার করেও তাদের কাজ করিয়ে নিতে পারবে। আর ভিডিও এডিট এর কাজ শিখে নিজের ইউটিউব চ্যানেল, ক্লাইন্ট এর চাহিদা মতো ভিডিও এডিট করা বা প্রোমো ভিডিও স্ক্রিপ্ট তৈরি করা ইত্যাদি কাজও করা সম্ভব।

 

ভার্চুয়াল সহকারী (Virtual Assistant)

অনেকেই রয়েছেন যাদের কখন কি কাজ করতে হবে তার লিস্ট তৈরি, ইমেইল আদান প্রদান, ফোনকলের উত্তর দেয়া এবং অন্যান্য কাজগুলো গুছিয়ে নিতে অতিরিক্ত লোকের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে অনেকেই বিশেষ করে যাদের কাজ বেশীরভাগই অনলাইনে তারা ভার্চুয়াল সহকারী নিয়োগ করতে পছন্দ করেন। যারা তার হয়ে তার কাজগুলো করে দিবে। যেহেতু এই কাজগুলো অনলাইনে বসেও করা সম্ভব সেহেতু এক্ষেত্রে সবসময় সঙ্গে কাউকে নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে না বলে অনেকেই এই কাজে নিয়োগ দিয়ে থাকেন এবং দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিজ্ঞতা অনুসারে এর জন্য তাই ক্লাইন্ট ভালো পরিমাণের অর্থ দিতেও রাজি থাকে। তাই এই কাজ শিখেও ভালো অবস্থান অর্জন করা যায়। তবে এখানে আরো কাজ থাকতে পারে যেমন কোন ব্লগার এর লিখা গুছিয়ে পোস্ট করা, ফেসবুক বা অন্য সোস্যাল অ্যাকাউন্ট দেখাশোনা করা ইত্যাদি। চাইলে এই কাজও করতে পারেন।

 

অনুবাদকারী (Translation)

যদি আপনি একাদিক ভাষায় পারদর্শী হয়ে থাকেন তবে অনুবাদকারী হতে পারেন। এক্ষেত্রে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় কনটেন্ট বা লিখা অনুবাদ করাই কাজ হয়ে থাকে। যদিও লিখালিখি (Writing) এর একটি অংশই হচ্ছে অনুবাদ করা তবে অনুবাদের ক্ষেত্রে সবসময় যেহেতু ভাষা নিয়ে আলাদা একটি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পরে তাই এটি আলাদা একটা বিষয় হিসেবেই ধরা হয়। আর সব সময় লিখে নয় কোন কোন ক্ষেত্রে শব্দের অনুবাদ করতে হতে পারে অর্থাৎ শব্দে রেকর্ড করে অনুবাদ করতে হতে পারে। ভাষা এবং দক্ষতা অনুসারে এখানেও আয়ের পরিমাণে পার্থক্য হতে পারে।

 

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine optimization)

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও। বলা যায় সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় মেথড এটি। এক্ষেত্রে বেশ কিছু উপায় বা টেকনিক অনুসরণ করে কোন ওয়েবসাইটের কনটেন্ট সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্টে শুরুতে আনাই হচ্ছে কাজ। যেমন একটি কোম্পানি মোবাইল ফোন নিয়ে কাজ করে এখন যদি কেউ কোন মোবাইলের ব্যাপারে সার্চ করে তবে সেই কোম্পানির ওয়েবসাইট যেন সার্চ রেজাল্টে সবার উপরে থাকে সেটাই এসইও এক্সপার্টদেরকে দেখতে হয়। যেহেতু হাজার হাজার ওয়েবসাইট থাকতে পারে এই একই বিষয়ের উপর তাই এখানে কিভাবে সবার উপরে আসা যায় সেটা নিশ্চিত করতে পারাই দক্ষ এক্সপার্টদের কাজ। আর একাজে রেজাল্ট এর ধরণ বা দক্ষতা অনুসারে ক্লাইন্ট ভালো পরিমাণের অর্থ প্রদানে রাজি থাকে। ফ্রীল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বেশী প্রতিযোগিতা হয় এই কাজের উপরেই। তাই এখানে আসার আগে কয়েকবার ভেবে নেয়া উচিৎ যে নিজেকে কতোটা দক্ষ করতে পারবেন।

 

প্রোগ্রামার (Programmer)

প্রোগ্রামার কি তা আসলে অনেকেই জানেন। তাও বলছি। মূলত কোন সফটওয়্যার তৈরি করতে প্রোগ্রাম লিখাই প্রোগ্রামারদের কাজ। এক্ষেত্রে ক্লাইন্ট ঠিক যেরকম প্রোগ্রাম চায় তার জন্য কোড লিখে প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে। কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে শুরু করে অনেক কিছুর জন্যই প্রোগ্রাম তৈরি করা সম্ভব বলে এই কাজের চাহিদাও অনেক বেশী।  আবার ওয়েবসাইট তৈরিতেও প্রোগ্রাম এর প্রয়োজন থাকে। কিছু ওয়েবসাইট যেমন গুগল, ফেসবুক বা এরকম ডায়নামিক ওয়েবসাইটগুলোর বেশীরভাগ কাজ প্রোগ্রাম দিয়েই করা হয়। যদি ভালো প্রোগ্রাম তৈরি করতে সক্ষম হন তবে ক্লাইন্টের জন্য বা নিজেদের জন্য প্রোগ্রাম তৈরি করে বাজারজাত করে আয় করা সম্ভব। প্রোগ্রামের ধরণ, প্ল্যাটফর্ম, সময়কাল ইত্যাদি বিবেচনা করে আয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এবং অনেকক্ষেত্রে এর জন্য গ্রুপ বা টিম প্রয়োজন হয়।

 

আশা করি এই পোস্ট থেকে ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া সম্পর্কে অনেক তথ্যই পেয়েছেন। পরবর্তী পোস্টে ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া নিয়ে আরো অনেক টপিক আলোচনা করতে চেষ্টা করবো। আর আপনাদের কোন মন্ত্যব বা সাজেশন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আপনার প্রশ্ন বা সাজেশন হয়তোবা আমাকে পরবর্তী পোস্টের টপিক হতে পারে যেখানে আরো কিছু শিখতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

 

শেষ পর্বঃ ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া – যা কিছু করা সম্ভব পর্ব ২

Related Posts

Leave a Comment