ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া

ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া – যা কিছু করা সম্ভব পর্ব ২

by Moin Uddin Ahmed Tipu
1491 views

অনেকেই জানতে চান অনলাইনের ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া নিয়ে। ফ্রীল্যান্সিং এ কি কি করা যায় এবং সে অনুযায়ী কোন কাজ শিখা যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অনলাইনে করা যায় এমন কাজের লিস্ট করা সম্ভব নয়। কেনোনা প্রায় সব কাজই অনলাইনে করা বা করানো সম্ভব। তারপরও চেষ্টা করা হলো কিছু কাজের নাম এবং সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে। আর এই লিস্ট অনলাইনে করা সম্ভব এমন কাজের মাত্র একাংশ এবং সংক্ষেপিত। এবং এখানে বেশী জনপ্রিয় কাজগুলোর বর্ণনাই দেয়া হলো।

প্রথম পর্বঃ ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া – যা কিছু করা সম্ভব পর্ব ১

 

সবচেয়ে বেশী ডিমান্ডের অনলাইন ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া

 

ব্লগার (Blogger)

ব্লগিং খুব জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। আপনার যদি কোন বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকে বা ভালো লিখতে জানেন তবে ব্লগিং এর মাধ্যমে তা প্রকাশ করেও আয় করতে পারবেন। যেমন আমার এই ওয়েবসাইটটিও আসলে একটি ব্লগ এবং এই পোস্টটি এক একটি ব্লগপোস্ট। যেহেতু আমি এই কাজ পারি সেহেতু পোস্ট করে আপনাদেরকে জানাতে পারছি একই সাথে আমিও আয় করতে পারছি। ব্লগিং থেকে আয়ের কয়েকটি উপায় রয়েছে। যেমন গুগল অ্যাডসেন্স বা স্পেস বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়া দিয়ে, অ্যাফিলিয়েশন করে, কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট সম্পর্কে পেইড পোস্ট করে ইত্যাদি। এব্যাপারে আরো জানতে কিভাবে আপনার ব্লগ থেকে আয় করবেন পোস্টটি পড়তে পারেন।

 

ফটোগ্রাফার (Photographer)

ভালো ছবি তুলতে জানলে অনেকভাবেই আয় করা সম্ভব। যেমন কোন প্রোগ্রামের ফটোগ্রাফি করে অথবা ভালো মানের ছবি তুলে বিক্রয় করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী জরুরী হচ্ছে আপনি কতো ভালো ফটোগ্রাফি জানেন। কেননা আপনার তোলা ছবির মান যদি ভালো না হয় তবে প্রোগ্রামের জন্য হায়ার হবার চান্স যতোটা কম ততটাই বিক্রয় হবার চান্স। আর ছবি বিক্রয় করার ব্যাপারে আরো তথ্য জানতে ফটোগ্রাফি বা ছবি তুলে আয় এবং স্মার্টফোনে ছবি তুলে আয় এই পোস্ট দুইটি কাজে আসতে পারে।

 

মিউজিসিয়ান (Musician)

আপনি কি মিউজিক করেন? মিউজিক ভালো জানেন? ভিন্ন ভিন্ন মিউজিক তৈরি করতে পারেন? যেমন ধরুন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তৈরি করতে পারেন? তাহলে আপনার তৈরি করা ভিডিও বিক্রয় করতে পারেন। এবং অর্ডার আসলে মিউজিক তৈরি করে দিতে পারেন। বর্তমানে এই কাজের চাহিদা প্রচুর। কেননা ইউটিউব ভিডিও বলেন, ওয়েবসাইট কনটেন্ট, গেম ইত্যাদিতে প্রচুর মিউজিক প্রয়োজন হচ্ছে এবং এর জন্য দিন দিন রয়্যালিটি ফ্রী মিউজিকের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজের দক্ষতা এবং মিউজিক অনুসারে আয় নির্ধারণ করা হয়।

 

গেম ডেভেলপার (Game Developer)

যদিও প্রোগ্রামিং এর একটি অংশ তবে গেম ডেভেলপ করতে আরো বেশী কিছু নলেজ প্রয়োজন হয়। তাছাড়া গেম ইঞ্জিন বা এক্সট্রা প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে হয় বলে প্রোগ্রামিং এর থেকে কিছুটা বেশী কঠিন হচ্ছে গেম ডেভেলপমেন্ট। গেম ডেভেলপমেন্ট শিখে গেম তৈরি করে অনেকভাবেই আয় করা সম্ভব। যেমন গেম বিক্রয় থেকে আয়, গেমের কনটেন্ট বিক্রয় করে আয় (ইন-গেম কনটেন্ট), বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয়, ক্লাইন্টের জন্য কাস্টম গেম তৈরি করে এবং গেম সোর্সকোড তৈরি ও বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় ইত্যাদি। ভালো গেম ডেভেলপার হিসেবে নিজেকে দাড় করাতে সক্ষম হলে এখান থেকে আয়ের পরিমাণ অনেক বেশী।

 

ফ্যাশন ডিজাইনার (Fashion Designer)

ফ্যাশন ডিজাইনার হলে আপনার জন্যও এখানে কাজের অভাব নেই। ক্লাইন্টের চাহিদা মতো ডিজাইন করে, বা ফ্যাশন ডিজাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নিজের তৈরি ডিজাইন বিক্রয় করে এখানে আয় করা সম্ভব। আবার সম্ভব হলে নিজের ডিজাইন ও তৈরি করা ড্রেস অনলাইনে সেল করেই আয় করা সম্ভব। তাছাড়া অনেক গার্মেন্টস বা কোম্পানি তাদের চাহিদা অনুসারে ডিজাইন পছন্দ করতে অনলাইনেও আসে এবং কোন ডিজাইন পছন্দ হলে ডিজাইন কিনে নেয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিও করে। এসব ক্ষেত্রে গ্রাহক বা ক্লাইন্টের চাহিদার পাশাপাশি বর্তমান ট্রেন্ড লক্ষ্য রেখে ডিজাইন করেও ভালো অবস্থান অর্জন করা সম্ভব।

 

তথ্য বিশ্লেষক (Data Analyst)

তথ্য বিশ্লেষক ব্যাপারটা একটু ভিন্ন রকমের কাজই বলা যায়। কি কাজের তথ্য বা কেন প্রয়োজন তার উপর নির্ভর করে এই কাজ ভিন্ন ভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন এই পোস্ট লিখতেও আমাকে অনেক তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়েছে। আবার বর্তমানে কি নিয়ে মার্কেটিং করলে ভালো আয় করা সম্ভব তা আপনি বিশ্লেষণ করতেই এই পোস্টটি পড়ছেন। তবে কারণ যেটাই হোক মূল ব্যাপার মূলত একই। একটা বিষয় বা বস্তু মার্কেট বা কোথাও ঠিক কি রকম প্রভাব বিস্তার কছে বা কোন কাজের ফলাফল কেমন হচ্ছে বা কোন নতুন প্রোডাক্ট মার্কেটে নামানো হলে কি রকম প্রভাব ফেলবে ইত্যাদি মার্কেট রিসার্চ করেই জানা সম্ভব আর সেটাই এই সেক্টরের কাজ। এবং কাজের সেক্টর বা ধরণ অনুসারে এখানের আয় কম বেশী হতে পারে তবে সবচেয়ে বেশী রেটের কাজগুলোর ভিতর একটি অবশ্য এই তথ্য বিশ্লেষণ কেননা এর ফলাফলের উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে বিধায় কাউকে নিয়োগের পূর্বে ক্লাইন্টরা বিশ্লেষকদের দক্ষতা যাচাই করে নিতে ভুল করবেনা।

 

অ্যাপ ডিজাইনার (Application Designer/Development)

অ্যাপ বলতে অ্যাপ্লিকেশানকেই বুঝানো হচ্ছে যা আসলে প্রোগ্রামিং। তবে এখানে মূলত মোবাইলের জন্য তৈরিকৃত অ্যাপ্লিকেশানগুলোকেই বুঝানো হচ্ছে। আর এই কাজ দুইভাবে করা যেতে পারে। সরাসরি অ্যাপ্লিকেশান তৈরি করা অথবা অ্যাপ্লিকেশানের জন্য অভয়ব তৈরি করা (গ্রাফিক্স)। আর অ্যাপ ডিজাইনের ক্ষেত্রে ডিজাইন করে মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়, ক্লাইন্টের চাহিদা অনুসারে তৈরি করে দেয়া এবং নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশান বাজারজাত করে আয় করা সম্ভব। আপনি কিভাবে বা কেন ডিজাইন করছেন তার উপর নির্ভর করে এবং কোন প্ল্যাটফর্মের জন্য কি ধরণের অ্যাপ ডিজাইন করছেন তার উপর ভিত্তি করে প্রাইস নির্ধারণ করা হতে পারে। বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেই সাথে অ্যাপের চাহিদা। ভালো অ্যাপ ডিজাইনার হয়ে তাই এখান থেকে ভালো আয়ের সুযোগ রয়েছে।

 

শিক্ষক (Tutor)

আপনি যদি কোন কাজ ভালো শিখাতে পারেন অথবা টিউটর হিসেবে ভালো হয়ে থাকেন তবে এক্ষেত্রেও আয়ের সুযোগ রয়েছে। যেহেতু এখন সবকিছুই অনলাইনে করা যায় সেহেতু আপনি পারলে অনলাইনেও শিক্ষকতা করতে পারেন। যেমন আমি ইংলিশ একটু কম পারি। আপনি চাইলে আমাকে অনলাইনে ভিডিও চ্যাট বা ভিডিও কোর্স করাতে পারেন। আর এরকম অনেক অনলাইন টিউটর ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে অনেকেই নিজেদেরকে সফল করে তুলছেন। কোন বিষয়ের উপর নিজেকে সেখানে প্রতিষ্ঠিত করে ছাত্র ছাত্রী পেয়ে যেতে পারেন। আর শিখানোর বিষয় এবং দক্ষতার উপর ভিত্তি করে ভালো আয়ও পেতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনাকে এখানে সফল হতে ভালো টিউটর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে হবে।

 

পরামর্শকারী (Consultant)

এই কাজটি একটু কঠিন বলা চলে এবং বর্তমানে সবচেয়ে বেশী বেতনের কাজগুলোর একটি এটি। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনলাইন মার্কেটিং কনসালটেন্ট। এক্ষেত্রে আমার কাজ হচ্ছে কোন ওয়েবসাইটের মালিক ঠিক কি করলে তাদের আয় বৃদ্ধি পাবে তার পরামর্শ দেয়া বা তারা ঠিক কিভাবে মার্কেটিং করলে সফল হতে পারবে তার আইডিয়া দেয়া। আবার আপনি যদি আইন নিয়ে পড়েন তবে আইনগত পরামর্শ দিতে পারেন অথবা আপনি ডাক্তার হলে ডাক্তারি পরামর্শ দিয়েও আয় করতে পারেন। আর আমাদের পোস্টের শুরুতেই বলেছি যে এখানে সব কিছুই করা যায় তার একটি বড় উদাহারণ হতে পারে এটি। কনসালটেন্ট হিসেবে যেকোনো সেক্টরেই কাজ করা সম্ভব। তবে দক্ষতা এবং সফলতার উপর নির্ভর করে এখানে আপনি নিজেকে ঠিক কতটুকু প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন তা। যেহেতু আপনার পরামর্শের উপর তাদের সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করবে সেহেতু এখানে আপনাকে দাড় করাতে অনেক কষ্ট করতে হবে সেটা বলে রাখাই ভালো। তবে আপনি যদি ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন বলে মনে করেন তবে শুরু করতে পারেন।

 

অ্যাকাউন্টিং অথবা নিরীক্ষণ (Accounting Or Bookkeeping)

এই কাজের ব্যাপারে মূলত অ্যাকাউন্টিং এর সবাই কম বেশী জানেন। প্রতিটি কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরই হিসেবে নিকেশ করার প্রয়োজন পরে। আর বড় কোম্পানিগুলো নিজস্ব লোক রাখলেও অনেক সময় ছোট পরিসরের কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সে সুযোগ থাকে না। তাই তাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে ফ্রীল্যান্সার হায়ার করে কাজ করানোই অনেক বেশী সহজ। তাছাড়া কাউকে বেতন দিয়ে প্রয়োজনের বেশী সময় রেখে দিতে হচ্ছে না বলে সাশ্রয়ী তাই তারা অনলাইনেই অ্যাকাউন্টিং এর কাজগুলো করিয়ে নিতে বেশী পছন্দ করে থাকেন। তবে এখানে কিন্তু বছরের শেষেই কাজ বেশী পাওয়া যায় কেননা সে সময়েই হিসেব মিলানো এবং ট্যাক্স বা রিলেটেড বিষয়ের কাজ থাকে যা করানোর জন্য ফ্রীল্যান্সার নিয়োগ দিতে হয়। তবে এখানে কাজের মাধ্যমে ভালো আয় করা সম্ভব এবং কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী কাজও পাওয়া যায়। এখান থেকে আয়ের পরিমাণ দক্ষতা এবং কাজ অনুযায়ী ভিন্ন।

 

এছাড়াও অনলাইনে ফ্রীল্যান্স জব আইডিয়া হিসেবে আরো ছোট বড় অনেক কাজ করা সম্ভব। যেগুলো করে অনলাইনে অনেকেই আয় করছেন। কাজগুলো মূলত ছোট খাটো কাজ এবং এর জন্য মূলত অনেক নলেজের প্রয়োজন হয় না। বলা যায় স্বল্পমেয়াদী কোর্স করেও কেউ এই কাজ শুরু করতে পারেন। তবে ক্যারিয়ার হিসেবে ধরা যাচ্ছে না বলে এই লিস্টে নেই তবে পরবর্তী পোস্টে সেগুলোকে উল্লেখ্য করতে পারি। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। আপনাদের মতামত পেলেই পরবর্তী পোস্টে সেগুলো নিয়েই লিখতে চেষ্টা করবো।

Related Posts

Leave a Comment